বাংলা কাব্যের ঐতিহ্য ও কবি আবুল হোসেন:বাংলা সাহিত্যের অন্যন্য প্রতিভাধর কবি রুপসী রূপসার উজ্জল নক্ষত্র আধুনিকতার প্রথম উদগত্যে কবি আবুল হোসেন খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার কৃতি সন্তান। রূপসা উপজেলার দেয়াড়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে। পিতা এস এম ইসমাইল হোসেন, চাকুরী করতেন পাকিস্তান পুলিশে। তিন ভাইয়ের ভিতর কবি ছিলেন জ্যেষ্ঠ। কবির মধ্যম ভ্রাতা এস এম আমজাদ হোসেন পাকিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। এস এম আশরাফ হোসেন তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা। কবির দুই পুত্র সেলিম হোসেন (সিজার) ও সেহেল হোসেন (মিশা)। চানিদা ও সুনিদা কবির দুই কন্যা। আবুল হোসেন চল্লিশের দশকের কবি। চল্লিশের দশক বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে খুব-ই গুরুত্বপূর্ন সময়। নিয়ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের ইতিহাসে চল্লিশের দশকে ঘটে গেছে হৃদয়ে আঁচড় কাটা অনেক ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, মনন্তর, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। তাই এই চল্লিশের দশক থেকে শুরু হয় পাকিস্তানের শাসক নামধারী শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম। ইতিহাস, সময়, সমকাল, অর্থনীতি, প্রেম, প্রপন্নতা, বিশ্বত্মোবোধের চেতনালোকে জেগে ওঠে কবি আবুল হোসেন। কুঠারাঘাত করতে সক্ষম হন বাংলা গদ্য কবিতায়। নিয়ে আসেন আধুনিকতার ছাপ।
যৌবনে পদার্পনের প্রথম পর্বে আঠারোতম জন্ম বার্ষিক বছরে ১৯৪০ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ “নব বসন্ত”প্রকাশিত হয় । এর পর দীর্ঘায়ু স্বনিষ্ঠ আত্মপ্রত্যয়ী কবি সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে নিয়ে এসেছেন সোনার জিয়নকাঠি। তার পরশে ঘুম ভাঙ্গিয়েছেন বাংলা কাব্য রাজকন্যার। একের পর এক লিখেছেন “বিরস সংলাপ”- ১৯৬৯, “হাওয়া তোমার কি দু:সাহস”-১৯৮২, “এখনো সময় আছে”-১৯৯৭, “আর কিসের অপেক্ষায়”-২০০০, “রাজ কাহিনী”-২০০৪, “ব্যঙ্গ কবিতা”-২০০৭, “কালের খাতায়”-২০০৮ প্রভৃতি কাব্য।
সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য তিনি ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮০ সালে একুশে পদক পান। এছাড়া তিনি জাতীয় কবিতা পুরস্কার নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, পদাবলী পুরস্কার, কাজী মাহবুবুল্লাহ পুরস্কার ও স্বর্ণপদক, আবুল হাসানাৎ সাহিত্য পুরস্কার, জনবার্তা স্বর্ণপদক, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, জনকন্ঠ গুণীজন সম্মাননা ও জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক সংবর্ধনাসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
বাংলা কাব্য সাহিত্যের অগ্রদুত কবি আবুল হোসেন ২৯ জুন ২০১৪ সালে ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন।
ভাষা সৈনিক ও শিক্ষাবিদ মালিক আতাহার উদ্দিন: ভাষা সৈনিক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মালিক আতাহার উদ্দিন ১৯৩৪ সালের ৫ এপ্রিল তার প্রৈত্রিক নিবাস রূপসা উপজেলার বাধল গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা দানবীর হাজী আফতাব উদ্দিন মল্লিক এবং মাতা সবুরণনেছা।
১৯৪৯ সালে সেন্ট জোসেফস্ উচ্চ বিদ্যালয় হতে মেট্রিকুলেশন পাস করে ব্রজলাল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে আই.এ পাস করেন এবং ১৯৫৩ সালে বি.এ পাস করেন।অত:পর ১৯৫৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি ডিগ্রী লাভ করেন এবং ১৯৬০ সালে বাংলা ভাষা সাহিত্যে এম.এ পাস করেন।
ছাত্র জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। বি.এল কলেজে ছাত্রাবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হন। সম্মিলিত বিরুদ্ধ পার্টিগুলোর সাথে কোমর বেধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন। এতে তিনি কাঙ্খিত ফল লাভ করেন। ১৯৫৩ সালে বিএল কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে মালিক আতাহার উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক (জি.এস) এবং ছাত্রলীগ থেকে বটিয়াঘাটা নিবাসী মো: আব্দুল ওহাব ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। মালিক আতাহার উদ্দিন ছিলেন খুলনা জেলার ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি বিএল কলেজে অধ্যয়ন কালে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহন এবং শহীদ হাদিস পার্কে জনসভায় “রাষ্ট্রভাষা বাংলা” নামে একটি প্রবন্ধ রচনা পাঠ করেন। বক্তৃতার মাধ্যমে জনগণকে মাতৃভাষার গুরুত্ব উপলদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। ১৯৫৪ সালে বিএল কলেজের অভ্যন্তরে (বর্তমান শহীদ মিনার স্থল) কাঠের তক্তা দ্বারা শহীদ মিনার নির্মান করা হয়। উক্ত শহীদ মিনার নির্মাণে সর্বাগ্নে ছিলেন মালিক আতাহার উদ্দিন, গোয়ালখালী নিবাসী খন্দকার জিয়া উদ্দিন আহমদ, কাশীপুরের মোল্যা বজলুর রহমান (১৯৫৫-তে জি.এস নির্বাচিত), বর্তমান খুলনার প্রবীন আইনজীবী মিজানুর রহীম। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইউব খানের শাসনামলে ১৯৫৮ সালে উক্ত শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর তিনি খুলনায় আইন ব্যবসায় নিয়োজিত হন। পাশাপাশি চলে রাজনীতি এরপর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন এবং মাওলানা ভাসানীর আদর্শে উদ্ধুদ্ধ হন। ১৯৬২ –র আগষ্টে তিনি প্রথম কারারুদ্ধ হন এবং কয়েকদিন পর কারামুক্ত হন। এরপর তিনি বহুবার কারারুদ্ধ ও কারামুক্ত হন। তিনি ১৯৬৯ এ গণআন্দোলনে অংশগ্রহন করেন এবং একই বছরে আইন ব্যবসা ত্যাগ করে দৌলতপুর দিবা/নৈশা কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নিয়োজিত হন। উক্ত কলেজে তিনি ০৫/০৩/১৯৭৩ থেকে ২২/০৬/১৯৮১ পর্যন্ত অধ্যক্ষের পদ অলংকৃত করেন এবং ০১/০৮/১৯৮৩ থেকে ৩০/১২/১৯৯৪ পর্যন্ত বেলফুলিয়াধীন বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষের পদে নিয়োজিত ছিলেন। ২৮/০৫/১৯৯৯ তারিখে তিনি খুলনার নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল কলেন।
তিনি একজন একনিষ্ঠ কর্মী ও আদর্শব্যক্তিত্ব ছিলেন। শিশুদের উন্নয়ন ও বিকাশে খুলনা শিশু একাডেমির কর্মকান্ডে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন। ন্যায় নীতি প্রতিষ্ঠায় আপোষহীন। সোহরাওয়ার্দী কলেজে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে বিধি মোতাবেক কাজের আদর্শ স্থাপন করেন। তিনি অত্যন্ত বিনয়ী, মিষ্টভাষী, মিশুক এবং প্রশাসনিক কাজে কঠোর ছিলেন। জীবনের শেষ প্রান্তে নিজ গ্রামে পিতার দানকৃত জমির উপর নির্মিত জে.বি.এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিনিই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস